সম্প্রতি ব্যবসার ক্ষেত্রে একটি বিষয় বেশি দেখা যাচ্ছে, অনেক ব্যবসায়ীরা পবিত্র উমরা পালনের সুযোগ প্রদানের পুরস্কার অফার দিয়ে পণ্য বিক্রি করছেন। বিষয়টি একটু খুলে বলছি, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এমন পুরস্কার/অফার দিয়ে বিজ্ঞাপন বা ভিডিও প্রচার করা হয় যে, এতো তারিখ থেকে এতো তারিখের মধ্যে যারা আমাদের প্রতিষ্ঠানের পণ্য ক্রয় করবেন, তাদের মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে নির্বাচন করে ৩ বা ৫ জনকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে উমরা পালনের জন্য পাঠানো হবে। ক্রেতারা উমরা পালেনর সুযোগ লাভের আশায় পণ্য ক্রয় করেন। আর এটা মূলত কোম্পানির পণ্য বেশি বিক্রি হওয়ার একটি মার্কেটিং কৌশল। প্রশ্ন হচ্ছে, পণ্যের বিক্রি বাড়ানোর মাকেটিং কৌশল হিসেবে পবিত্র উমরা পালনের মতো ইবাদতকে পুরস্কার বা অফার হিসেবে ঘোষণা করাটা ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ হবে কি?
শরয়ী দৃষ্টিতে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বিক্রি বাড়ানো ও ক্রেতাদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে পণ্য ক্রয়ে বিশেষ হাদিয়া/গিফট/উপঢৌকন এর অফার দেয়া বৈধ। এক্ষেত্রে গিফট পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট মেয়াদে বা নির্ধারিত সংখ্যক পণ্য ক্রয়ের শর্ত করাও শরীয়ত অনুমোদিত। তবে অফারের কারণে পণ্যের দাম স্বাভাবিক থেকে বাড়ানো যাবে না ও গুণগত মান কমানো যাবে না। এবং পণ্য ক্রয়ই ক্রেতার মূল উদ্দেশ্য হতে হবে, শুধু লটারি বা পুরস্কার জেতার উদ্দেশ্যে প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও পণ্য ক্রয় করা যাবে না।
উল্লেখ্য, ক্রয়-বিক্রয়ের মূল চুক্তিকে বাধাগ্রস্থ করে না এবং ধোঁকা-প্রতারণার পথ খোলে না, ক্রেতা-বিক্রেতার এমন শর্ত সামাজিকভাবে ব্যাপক প্রচলিত হলে সম্পূর্ণ বৈধ। তবে যে শর্ত দ্বি-পাক্ষিক দন্ধের কারণ হয় তা বৈধ নয়।
সুতরাং প্রশ্নোক্ত হজ্জ-উমরার অফার দিয়ে পণ্য বিক্রয় করা সম্পূর্ণ বৈধ। তবে অফারের কারণে পণ্যের মূল্য স্বাভাবিকের তূলনায় বাড়ানো বা গুণগত মানে হ্রাস করা বৈধ হবে না। আর নিছক দ্বি-পাক্ষিক লেনদেনে মালিকানাকে সন্দেহে ফেলে তথা জুয়া সংশ্লিষ্ট লটারী অবৈধ হলেও যা দ্বারা শুধু ব্যক্তি বা বস্তু নির্ধারণ করা হয় এমন লটারী অবৈধ নয়। তাছাড়া স্বেচ্চায় প্রদত্ত এক পক্ষীয় হিবা বা গিফট বিতরণে লটারী সর্বসম্মতিক্রয়ে জায়েয। বিধায়, শর্ত পাওয়া গেলে ব্যবসায়ীর জন্য ক্রেতাকে উমরাহ করানো আবশ্যক গণ্য হবে।
বি.দ্র: হজ্জ-উমরাহ মূলক ইবাদতকে অফার হিসাবে দেয়ার দ্বারা শরয়ী কোনো অসুবিধা হবে না।
الادلة الشرعية
القرآن الكريم: سورة البقرة: 275
وَأَحَلَّ اللَّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا…
السنن الكبرى للبيهقي: رقم: 14821
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- :« الْمُسْلِمُونَ عِنْدَ شُرُوطِهِمْ فِيمَا وَافَقَ الْحَقَّ »
صحيح البخاري: رقم: 2593
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَرَادَ سَفَرًا أَقْرَعَ بَيْنَ نِسَائِهِ فَأَيَّتُهُنَّ خَرَجَ سَهْمُهَا خَرَجَ بِهَا مَعَهُ…الخ
الهداية شرح بداية المبتدي: 3/86 الشاملة.
كل شرط يقتضيه العقد كشرط الملك للمشتري لا يفسد العقد لثبوته بدون الشرط، وكل شرط لا يقتضيه العقد وفيه منفعة لأحد المتعاقدين أو للمعقود عليه وهو من أهل الاستحقاق يفسده.
بحوث في قضایا فقہیة المعاصرة: 2/ ۲35، کتاب البیوع، ط: دار العلوم كراتشي
إن مثل ہذہ الجوائز التي تمنح علی أساس عمل عملہ أحد لا تخرج عن کونہ تبرعاً وہبةً؛ لأنہا لیس لہا مقابل، وأن العمل الذي عملہ الموہوبُ لہ لم یکن علی أساس الإجارة أو الجہالة، حتی یقال: إن الجائزة أجرة لعملہ، وإنما کان علی أساس الہبة للتشجیع، وجاء في الموسوعة الکویتیة: الأصل إباحة الجائزة علی عمل مشروع سواء کان دینیًا أو دنیویًا لأنہ من باب الحث علی الخیر والإعانة علیہ بالمال، وہو من قبیل الہبة.
فتاوی عثمانی: ۳/۲۵۷، کتاب البیوع، ط: مکتبہ معارف القرآن
…”بندے کے خیال میں یہ انعام ”زیادة في المبیع“ نہیں ہے؛ بلکہ ایک ہبہٴ مبتدئہ کا ایک طرف وعدہ ہے، بائع اور مشتری میں سے کوئی بھی اسے ”زیادة فی المبیع“ نہیں سمجھتا، نہ عرفِ عام میں اسے ”زیادة فی المبیع“ سمجھا جاتا ہے اور شرعاً بھی یہ ضروری نہیں ہے کہ بیع تام ہونے کے بعد جب بھی بائع مشتری کو کوئی چیز بلا قیمت دے، تو اسے ”زیادة فی المبیع“ قرار دیا جائے۔