মাসায়েল24

২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ রাত ২:৫০
সাম্প্রতিক

হাজী সাহেবগণ মসজিদে হারাম, আরাফা, মুযদালিফা ও মিনায় নামাজ কসর করবে না পূর্ণ পড়বে ?

প্রশ্ন: কোন ব্যক্তি যদি মসজিদে হারাম, আরাফা, মুজদালিফা, মিনা সহ মোট ১৫ দিন থাকার নিয়ত করে তাহলে সে নামায কসর করবে না পূর্ণ নামায আদায় করবে ? বর্তমান সরকার নাকি মক্কা শরীফের সিটির মধ্যে আরাফা মুজদালিফা ও মিনাকে ও শামিল করেছে সে হিসেবে উক্ত চারটি স্থান এক স্থানের হুকুমে হবে কিনা ? উক্ত সুরতে কোন কোন আলেম পূর্ণ নামায পড়ার, আর কিছু আলেম কসর করার ফতোয়া দিচ্ছেন কোনটি সহীহ ?

উত্তর:হাজী সাহেবান মক্কা শরীফে ৮ই জিলহজ্জের পূর্বে ১৫ দিন বা তার অধিক সময় ইকামতের নিয়ত করুক বা না করুক উভয় অবস্থায় মিনা’ মুজদালিফা’ ও আরাফায় নামায পূর্ণ আদায় করবে না ক্বসর করবে বিষয়টি নির্ভর করে মিনার স্থানটি শরয়ী দৃষ্টিতে মক্কা মরীফের অন্তর্ভূক্ত কি-না তার উপর। এ নিয়ে ওলামা ও ফুকাহাদের বিভিন্ন মতামত রয়েছে। তাই এ বিষয়টিকে প্রথমে স্পষ্ট করে ব্যক্ত করা প্রয়োজন। মিনা’ মুজদালিফা’ ও আরাফা হজ্জ পালনের সুনির্দিষ্ট পবিত্র স্থান সমুহ কিয়ামত পর্যন্ত এ সব স্থান সমূহে কোন পরিবর্তন ও পরিবর্ধন ঘটবে না। তবে নামায পূর্ণ করা ও ক্বসর করার ব্যাপারে দেখতে হবে এইসব স্থানগুলো মানুষের ‘ওরফে’ বা প্রচলনে সম্পূর্ণ পৃথক পৃথক স্থান গণ্য হয়? না এক স্থান অপর স্থানের সাতে একাকার হয়ে এক স্থান হিসেবে ধর্তব্য হয়? আমাদের জানামতে বহু আগে থেকেই মিনা বিভিন্ন কারনে মক্কাবাসীর ‘ওরফে’ ও সমাজে মক্কার অন্তর্ভূক্ত বা অধীনস্ত হিসেবে ধরা হচ্ছে। আর শরীয়তের দৃষ্টিতে স্থানের ক্ষেত্রে ‘ওরফ’ হচ্ছে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য।

(১) আল্লামা তাকী উসমানী দা: বা: এর এ ব্যাপারে একটি প্রশ্নের জবাবে মসজিদে হারামের খতিব মরহুম আব্দুল্লাহ বিন সুবাইল (র:) বলেন: অর্থাৎ মক্কা শরীফের আবাদি মিনা পর্যন্ত সম্প্রসারণ হওয়ায় মিনা এখন মক্কা শহরের একটি উপশহর হয়ে গেছে। সৌদি সরকারও মিনাকে মক্কা শহরের মহল্লা গণ্য করে নিয়েছে। যদিও বিশেষ কারণে বিল্ডিং নির্মাণে বাধা প্রদান করেছে, তাই মক্কা থেকে যারা মিনা যায় তাদের নামাজ ক্বসর করা যাবে না। কারণ তারা মুসাফির গণ্য হবে না।

(২) মক্কাবাসীদের সুপ্রসিদ্ধ ইলমি প্রতিষ্ঠান মাদ্রাসায়ে সালুতিয়াতে এ বিষয়ে একাধিকবার ফিকহি সেমিনার করে। বিজ্ঞ উলমা ফকীহদের যৌথ সিদ্ধান্তের কথা ফতোয়া আকারে প্রকাশ করেছে যে, মিনা বর্তমানে মক্কা শহরের একটি মহল্লা।

(৩) ১৪২৪ হিজরী ১৭ ই জিলহজ ঐ মাদ্রাসা সালুতিয়ায় পূর্ব এশিয়া মহাদেশের বিজ্ঞ ফকিহ ও মুফতিয়ানে কিরামের ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত ফতোয়া আকারে প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, যে সব হাজ্বী সাহেবান মক্কা শরীফে অবস্থান করেছেন, তাদের হজ্জ পালন পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত ১৫ দিন বা তার অধিক সময় মাঝখানে মিনা’ মুজদালিফা’ এবং দিনের কিছু অংশ আরাফায় অবস্থান করা সত্ত্বেও তারা মুকীম বলে গণ্য হবেন। নামায পূর্ণ পড়বেন। কেননা মিনা এবং মুজদালিফা উভয় জায়গা এখন মক্কা শরীফের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। আর আরাফা এখনো অন্তর্ভুক্ত না হলেও যেহেতু শুধু দিনের বেলায় আরাফায় অবস্থান করা হয় রাত্র যাপন হয় না। হলে ও তা মুকিম হওয়ার মতো কোন স্থান নয়;বরং খোলা ময়দান, তাই আরাফা গমন মুকিম হওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায় নয়।

সুতরাং সেখানে ও হাজী সাহেবগন পূর্ণ নামায আদায় করবেন, কসর নয়। উপরোক্ত বিষয়গুলো উলামা ও মক্কাবাসী ফকীহদের ও হারামের খতিবদের সর্বসম্মত হওয়ার কারণে মিনা যে মক্কার শাখাগত মহল্লা এটা পরিষ্কার। আর মুজদালিফায় রাত্রী অবস্থান স্থায়ী নয়। অর্থাৎ আরাফায় শুধু দিনে অবস্থান হয়ে থাকে রাত্রি যাপন হয় না, বিধায় এগুলো মুকিম হওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায় নয়। হ্যাঁ মিনার অবস্থান ও রাত্রিযাপন শরীয়তে গ্রহণযোগ্য হলেও তা মক্কার মহল্লা বলে গণ্য। উপরোক্ত শরয়ী নীতিমালার ভিত্তিতে আপনার প্রশ্নের উত্তর নিম্নরূপ।

(১) হাজ্বী সাহেবানদের মক্কা শরীফে প্রবেশ থেকেই মাঝখানে মিনা’ মুজদালিফা’ ও আরাফায়’ গমন করার দিনগুলোসহ ১৫ দিন বা তার অধিক সময় অতিবাহিত হওয়ার পর মক্কা শরীফকে বিদায় জানালে এসব হাজ্বীগন মুকিম সাব্যস্ত হবেন। মিনা ,মুজদালিফা, আরাফা সহ সব জায়গায় তারা পূর্ন নামাজ আদায় করবেন, কসর নয়।

(২) যে সব হাজ্বিগন ৮তারিখ মিনায় রাত্রি যাপন না হওয়ার পূর্বে মক্কা শরীফে ১৫ দিনের নিয়তে ইকামত সহ অবস্থান করেছেন তারা অবশ্যই মক্কাতেই মুকীম হয়ে গেছেন। সেখান থেকে মিনা, মুজদালিফা ও আরাফায় গমন করলে মক্কা থেকে এসব জায়গার দূরত্ব সফরের দূরত্বের পরিমাণ না হওয়ায় নামায পূর্ণ করবে, কসর করবে না। কারণ এরা তো মক্কা শরীফেই মুকীম। মিনা, মুজদালিফা ও এবং আরাফায় আগমন করার কারণে ইকামত বাতিল হবে না। এ জায়গায় গুলোতে তারা মুকীমই থাকবেন।

সর্বশেষ কথা হচ্ছে, যে সব হাজীদের মিনা গমনের পূর্র্বেই মক্কা শরীফের অবস্থান ১৫ দিন হয় না; বরং হজ্জের কাজ শেষ করা পর্যন্ত ১৫ দিন হয়, তারা মুকীম না মুসাফির এ নিয়ে বর্তমানে ওলামাদের মধ্যে যে মতভেদ রয়েছে আমাদের মতামত উপরে তুলে ধরলাম। সাথে সাথে একথা মনে রাখা দরকার যে, ইতমাম ও কসর নিয়ে মতভেদ হলে শরীয়তের নীতিমালা অনুযায়ী ইতমাম করাই অগ্রগণ্য, কসর নয়। তাই হাজ্বিদের জন্য ইকামতের ফতোয়ার উপর আমল করাই সর্বাধিক নিরাপদ পন্থা। (বাদায়ে ১/৩২৫,হিন্দিয়া ১/২০০,আহসানুল ফাতোয়া ৪/৯৮)

Loading

Facebook
X
WhatsApp
Telegram